ফুটবল











 ফুটবলের আদি নাম কুজু। যা চিনে প্রথমে প্রচলিত হয়। 

বাংলাদেশে ফুটবল খেলার ইতিহাস

বর্তমানে কেউ যদি আপনাকে বলে যে আশি বা নব্বই দশকে বাংলাদেশে ফুটবলের জনপ্রিয়তা ছিলো ক্রিকেটের চেয়েও কয়েকগুন বেশি তাহলে আপনি হয়তো একটু অবাকই হবেন। অথচ বাস্তবতা ছিলো ঠিক এমনটাই। ফুটবলের জনপ্রিয়তা এদেশে বহু আগে থেকেই। সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকে এদেশে ফুটবলের চর্চা শুরু। তখন থেকেই এদেশের মানুষের মনে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হয়ে আছে ফুটবল। 

তবে অতীতে এদেশে ফুটবল যতটা জনপ্রিয় ছিলো বর্তমানে ঠিক তততাই হারিয়ে যাওয়ার পথে আমাদের ফুটবল। ১৯৯৭ সালের পর উপমহাদেশে ক্রিকেটের যে গনজোয়ার আসে অনেকটা সে কারনেই হারিয়ে যেতে বসে ফুটবল। এছাড়াও দুর্নীতি,অদক্ষ লোকের হাতে ফুটবল পরিচালনার দায়িত্ব,রাজনীতির প্রভাব,ফুটবল ফেডারশনের ব্যর্থতা ,বিভিন্ন ব্যাবসায়ীদের হাতে দেশের জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাবগুলোর নিয়ন্ত্রন ইত্যাদি কারনেও দেশের ফুটবল আজ হারিয়ে যাওয়ার পথে। 

 

বাংলাদেশের ফুটবল ইতিহাসকে মূলত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। উপমহাদেশে ফুটবলের সূচনা,স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবল ও বর্তমানে বাংলাদেশের ফুটবল।

 

উপমহাদেশে ফুটবলের সূচনা

ভারতীয় উপমহাদেশে ফুটবলের সূচনা মূলত ব্রিটিশদের হাত ধরেই। ব্রিটিশরাই এদেশে ফুটবলের প্রচলন শুরু করে এবং এদেশের মানুষদের ফুটবল খেলতে উৎসাহী করে। সিপাহী বিদ্রোহের পর ব্রিটিশরা জোরালো ভাবে ফুটবলে মনোযোগ দেওয়া শুরু করে। ইংরেজরা স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন টূর্নামেন্ট আয়োজন করতে থাকে। ততকালীন কোলকাতার ছাত্র নগেন্দ্র প্রসাদ বন্ধুদের কাছ থেকে চাদা তুলে একটি ফুটবল কেনে এবং এবং তার প্রচেষ্টাতেই কোলকাতায় ওয়েলিংটন ক্লাব ও শোভাবাজার ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে গঠিত হয় ভারতবর্ষ ফুটবল এসোসিয়েশন। 

পূর্ব বাংলায় ১৯৩৬ সালে গঠিত হয় ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। এই ক্লাবের মাধ্যমে ঢাকার মুসলিম সমাজে ক্রীড়া জাগরণ সৃষ্টি হয়। মোহামেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই মূলত এই অঞ্চলে ফুটবলের জাগরণ শুরু হয় যা পরবর্তীতে এদেশের ফুটবলের প্রসারের জন্য ব্যপকভাবে ভুমিকা রাখে। 

 

স্বাধীন বাংলাদেশের ফুটবল

পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো যুদ্ধ চলাকালে গঠিত প্রথম দল হচ্ছে স্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবল দল। স্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবলের রয়েছে সোনালি অতীত। স্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবল দল মূলত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দেশের পক্ষে জনমত গঠনের জন্য কাজ করতো। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের জন্য তহবিল গঠন, মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাইরের বিশ্বের জনমত গঠন করা এসব ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ ফুটবল দল। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করলে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন গঠিত হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত কোনো অফিসিয়াল সফরে যায় মালয়শিয়ায়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ফিফার সদস্য পদ লাভ করে।১৯৮৬ সাল থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তজার্তিক টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ফুটবল

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের ফুটবল যেনো একটি হতাশার নাম। অতীতের তুলনায় বাংলাদেশ ফুটবলের প্রতি যেনো এক ধরনের অনীহা তৈরি হয়েছে দর্শকদের। আগে ক্লাব ফুটবল হোক বা জাতীয় দল ফুটবলের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও ভালোবাসা ছিলো অন্যরকম পর্যায়ের। বর্তমানে রাজনৈতিক ও ব্যাক্তি স্বার্থসহ বিভিন্ন কারনে দেশীয় ফুটবলের এমন অধপতন হয়েছে।

আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ অর্থাৎ ভারতের দিকে তাকালেই দুই দেশের ফুটবল উন্নয়নের বিষয়টি চোখের সামনে উঠে আসে। বর্তমানে ভারতের ফিফা র‍্যাংকিং ১০১। অন্যদিকে বাংলাদেশের ফিফা র‍্যাংকিং ১৯২। অর্থাৎ প্রায় ১০০ ধাপ দূরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ভারতের তুলনায়। অবকাঠামোগত দিক দিয়ে দুই দেশের ফুটবলে রয়েছে আকাশ পাতাল তফাত। ভারতীয় লীগ ফুটবলও বর্তমানে অনেক এগিয়ে আছে।যা তাদের দেশীয় ফুটবল উন্নয়নের অন্যতম কারন।

ক্রমাগত ক্রিকেটের অভাবনীয় উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তাও ফুটবলের হারিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারন। এছাড়াও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের কর্তাব্যক্তিদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে অনীহা, দুর্নীতি, প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের অভাব ছাড়াও আরও বিভিন্ন কারন রয়েছে। বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির জন্য একদম মাঠপর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। ফুটবল ফেডারেশনের দায়িত্বে সৎ ও নিষ্ঠাবান লোকেদের বসাতে হবে যারা সত্যিই দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিতে সক্ষম। তবেই দেশের ফুটবলের সুদিন ফিরে আসবে।

 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

গ্লোবাল বিডির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url